‘না’ শব্দটি মানব ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ নিঃসন্দেহে। মানুষকে সাধারণ উষ্ণ রক্তের ম্যামল থেকে “অসাধারণ”(!) প্রাণীতে পরিণত করতে এই শব্দটির ভূমিকাই সর্বাধিক।
ফ্রয়েড এর ‘প্লেজার প্রিন্সিপাল’ কে বেস করে আলোচনা শুরু হলে তা সুবিধাজনক হয় এই ক্ষেত্রে। প্লেজার প্রিন্সিপাল এর একেবারে মোদ্দাকথা হচ্ছে, মানুষ প্লেজার পেতে চায় এবং তার যাবতীয় একশন এই প্লেজার পাবার আকাঙ্ক্ষা থেকেই উদ্ভূত। অর্থাৎ, যাবতীয় আকাঙ্ক্ষা, তা ন্যায় হোক-অন্যায় হোক, সহজ হোক-কঠিন হোক, বাস্তব হোক-অবাস্তব হোক, তাতে “হ্যা” বলাটাই প্লেজার প্রিন্সিপাল দিয়ে চালিত হওয়া।ইড নামক মনের অংশটি এই প্লেজার সংক্রান্ত আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্র এবং নিয়ন্ত্রক।
অন্যান্য প্রাণীর মতই মানুষও আদতে একটি প্রাণী। আমাদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও সাংস্কৃতিক বন্ধন (ইগো, সমাজ, আইন ইত্যাদি) আমাদের প্রবৃত্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রন করে বা করতে বাধ্য করে। অর্থাৎ, আমরা প্লেজার প্রিন্সিপাল দিয়ে চালিত ‘না’ হবার চেষ্টা করি, যা আমাদেত অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে। আবার, মানুষের ভেতরেও সব মানুষ একই পরিমানে ইন্দ্রিয়সুখ নির্ভর নয়। উদাহরণস্বরুপ, আমরা কল্পনা করতে পারি দুইটা এক্সট্রিমকে, প্রথমত, সাধু/অধ্যাত্মিক সাধনাকারী এবং দ্বিতীয়ত, পাগল (সমাজের দৃষ্টিতে)। পুরোপুরি প্লেজার প্রিন্সিপাল দ্বারা চালিত মানুষদের সমাজ ‘পাগল’ হিসেবে চিহ্নিত করে। কেননা তা সমাজের কোর কিছু ফাংশনিং ব্যাপারে সমস্যা তৈরী করে এবং মানুষকে আবার তার আদিমতম প্রবৃত্তিতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। অন্যদিকে, সাধুগণ হচ্ছেন ‘প্লেজার প্রিন্সিপাল’ কে পুরোপুরি/ প্রায় পুরোপুরি ডিনাই করা মানুষ। খেয়াল করেন, ‘ডিনায়াল’ (Denail) অর্থ অস্বীকার, আরো সহজ অর্থে ‘না’। অর্থাৎ, সাধুগণ ‘না’ এর চর্চা করেন। পুরোপুরিভাবে ‘না’ আত্মস্থ করতে পারলে, তখন তিনি প্লেজার প্রিন্সিপাল থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়ে যান।
যামিমাং পুষ্পিতাং বাচং প্রবদন্ত্যবিপশচিত, বেদবাদরতাঃ পার্থ নান্যদস্তীতি বাদিন (শ্লোক ৪২) কামাত্মানঃ স্বর্গপরা জন্মকর্মফলপ্রদাম, ক্রিয়াবিশেষবহুলাং ভোগৈশ্বর্যগতিং প্রতি (শ্লোক ৪৩)
(শ্রীমদ্ভগবদগীতা, সাংখ্যযোগ শ্লোক ৪২ ও ৪৩)
অর্থাৎ, বিবেকবর্জিত লোকেররাই বেদের পুষ্পিত বচনে আসক্ত না হয়ে স্বর্গসুখ ভোগ, উচ্চকূলে জন্ম, ক্ষমতা লাভ, ইত্যাদি সকাম কর্মকেই জীবনের চরম উদ্দেশ্য হিসেবে মনে করে। ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ এবং ঐশ্বর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তারা মনে করে যে, তার উর্ধে আর কিছুই নেই।
আবার, ইসলাম ধর্মে আখলাক বা চরিত্র দুই প্রকার। আখলাকে হামীদা এবং আখলাকে যামীমা। এখানে, আখলাকে যামীমা বলতে নিন্দনীয় চরিত্র বোঝানো হয়েছে, যারা তাদের মনের ইন্দ্রিয়গত প্রবৃত্তি দ্বারা চালিত হয়। অর্থাৎ, প্লেজার প্রিন্সিপাল দ্বারা চালিত হয়। একই সাথে এটাও বলা হয়েছে যে, সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধ হল ‘তার নিজের প্রবৃত্তির সাথে যুদ্ধ’। অর্থাৎ, প্লেজারকে ডিনাই করা।
তাই, ‘না’ (The NO) কে বলা হয় অধ্যাত্মিকতার সর্বশেষ স্তর।
কিছু সাহায্যকারী রেফারেন্স নিম্নরূপ-