প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক
গল্পের শুরুটা সেই কলোনীর সময়ে, যখন মার্কেন্টালিজম বা ব্যাপারীগিরির রমরমা অবস্থা। পুঁজিবাদ তখন তার বয়ঃসন্ধিকাল পার করছে কেবল। কলোনিয়াল শক্তিগুলো নতুন নতুন ভূ-খন্ড “আবিস্কার” করছিল ,সাথে “আবিস্কার” করছিল নতুন নতুন মানব সমাজ। এই মানব সমাজগুলোর আচার-রীতি-নীতি-বিশ্বাস-আচরণ ইত্যাদি এত আলদা ছিল তাদের থেকে যে, ব্যবসা করা বা “শাসন” করা ছিল খুবই কঠিন ব্যাপার। এই প্রেক্ষিতে, ওইসব মানুষদের “বোঝার” প্রয়োজন পড়ল এই কলোনিয়াল শক্তিগুলোর যাতে ব্যবসায় সুবিধা হয়।
পরবর্তীতে যখন নানান জায়গায় তারা শাসক বনে বসল, তখন এই বুঝাবুঝির প্রয়োজনটা আরো জরুরী হয়ে উঠল। কেননা, প্রজাকে না বুঝলে শাসনকার্য চালানো যায় না। এই প্রসংগে একটি উদাহরণ দিতে আগ্রহ হয়। এই উদাহরনটি আমি পেয়েছিলাম সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সিরিজের “ঘুড়ঘুটিয়ার ঘটনা” গল্পে (আমি নাম ভুলে গিয়েছিলাম। জনাব Rifat Hasan Ador নামীয় এক স্নেহাশিস মনে করিয়ে দিয়েছে। কৃতজ্ঞতা)
There was a brown crow.
There was a brown crow.
(দারওয়াজা) (বান্ধ) (কারো)
ইংরেজ বাবুরা এইভাবে হিন্দি বলার চেষ্টা করত যাতে তাদের খেদমতকারীদের “নির্দেশ” দিতে পারে। কিন্তু এই জ্ঞান নিয়ে তো আর রাজ্য চালানো যায়না। তাই প্রয়োজন হল, ওই মানবগোষ্ঠীগুলোকে জানার-বোঝার-বিশ্লেষণ করার। জন্ম নিল নৃবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞানী, যার মূল হাতিয়ার হল এথনোগ্রাফি। এখানে একটি বিখ্যাত বই, Mutiny on the Bounty এর কথা উল্লেখ করতে চাই। এর মূল চরিত্র ক্রিশ্চিয়ানের দায়িত্ব ছিল তাহিতি দ্বীপের অধীবাসিদের ভাষার একটি “ডিকশনারী” তৈরী করা এবং এর ব্যাকরণ জানা।
ব্রিট্রিশ সম্রাজ্যর এই ভাষা জানা বা ব্যাকরণ জানার উদ্দেশ্য ছিল একেবারেই ব্যবসায়িক জায়গা থেকে। তারা ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে, এবং পরবর্তীতে শাসনের উদ্দেশ্যে এই কাজগুলো করত। এই জায়গায় ভাষাবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানীদের কাজের ক্ষেত্রে এক ধরনের অধিক্রমণ দেখা যায়। নৃবিজ্ঞানীরা সমাজকে বুঝতে যেয়ে ভাষা বুঝেছেন, আর ভাষাবিজ্ঞানীরা ভাষাকে বুঝতে যেয়ে সমাজ বুঝেছেন। ফলে, নৃবৈজ্ঞানিক গবেষণা পদ্ধতি এবং ভাষাবিজ্ঞানের গবেষণা পদ্ধতির একটি যুগান্তকারী মেলবন্ধনের সম্ভাবনা তৈরী হল, যার ফলে কোন সমাজকে আরো ভালভাবে বুঝতে পারা যেতে পারে বলে মনে করা হল।
(চলবে)
সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে যা ব্যবহার করা হয়েছে-
The Changing Story of Ethnography https://www.sunypress.edu/pdf/60804.pdf
A Brief Story of Ethnography https://link.springer.com/chapter/10.1007/978-94-6300-381-0_1