যদি হয় আজ্ঞা, তবে হোক শুরু “জ্ঞাড্ডা”
বি.দ্র: এই লেখাটি খুবই হালকা চালে লেখা। লেখায় রস আছে প্রচুর, তবে রসালো না।
“তুই কচুটা পারিস” বলিয়া তার ভাগ্নেকে দক্ষিণ হস্তের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেইখা গটগট বের হইবার পথে বাবু শুনিলেন ভাগ্নের বিলিতি বউ তার নালায়েক ভাগ্নেকে “কনগ্রাচুলেট” করিয়া পুছিল, Cheer up! He showed you thumb’s Up!
“আড্ডা” খুবই পরিচিত একটি শব্দ এবং কনসেপ্ট। অর্থাৎ, আমরা এই বিশেষ শব্দটির দুইটি দিকেই আলোকপাত করব। ইংরেজীতে “আড্ডা” শব্দের প্রায় সমার্থক শব্দ বেশকিছু আছে, যেমন: Chat, Gossip, Temporary lodging, Meeting place, Rrendezvous ইত্যাদি। হিন্দি ভাষাতেও আড্ডা শব্দটি রয়েছে। ড. এ. এন. এম. ওয়াহিদ- এর এই সংক্রান্ত একটি লেখার অংশ বিশেষ হুবহু তুলে দিচ্ছি যা ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫-তে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ প্রকাশ করেছে।
কারণ বাংলা ছাড়াও হিন্দি ভাষায় আড্ডা শব্দের প্রচলন আছে। হিন্দিতে আড্ডার প্রয়োগ হয় বিশেষ্য (নাউন) অর্থে। বাংলায় কিন্তু আড্ডা ক্রিয়া (ভার্ব) এবং বিশেষ্য (নাউন) দু’পদেই ব্যবহূত হয়। আড্ডাকে সংজ্ঞায়িত করা একটু কঠিন বৈকী। ইংরেজী শব্দ ‘গসিপ’ দিয়ে আড্ডাকে ঠিক বোঝানো যায় না। ‘গসিপ’ প্রধানতঃ একটি নেতিবাচক শব্দ। বাঙালির আড্ডার কিছু ডাউনসাইড থাকলেও একে পুরোপুরি ‘গসিপ’ এর সমার্থক বলা যায় না।
তার কথার সাথে আমি পুরোপুরি একমত এক্ষেত্রে। এবার ফোকাস করি ‘কনসেপ্ট হিসেবে আড্ডা’ অংশে।
আড্ডা অর্থ নিয়ে যে সমস্যা এবং সমার্থক শব্দের অপ্রতুলতা, তা মূলত এই কনসেপ্ট অংশের জন্যই। আড্ডা বলতে আমরা যা বুঝি বা বুঝাই, সেইটার সাথে তাদের জানাবোঝা একই না। এই জানাবোঝাটাই কনসেপ্ট। আমি খুবই সরলীকৃত কিছু বৈশিষ্ট্য বলি যার উপর ভিত্তি করে আড্ডা সংক্রান্ত আমাদের কনসেপ্ট গড়ে উঠেছে।
১. বিষয়ের বৈচিত্র্য এবং গতিময়তা অর্থাৎ, আড্ডা কোন বিশেষ বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকে না বরং নানান বিষয়ে দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে।
২. স্বশরীর উপস্থিতি অর্থাৎ, ইন্টারাকশন ফেস টু ফেস হয়।
৩. স্মল গ্রুপ থেকে মিডিয়াম গ্রুপ অর্থাৎ , ৩ থেকে শুরু করে ২০-২৫ জন এর মধ্যেই আড্ডা হয়ে থাকে। তবে সাধারণত, আড্ডা হয় স্মল গ্রুপে ৩-৯ জন এর মধ্যে।
এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে “আড্ডা” এর মৌলিক বৈশিষ্ট্যর অন্যতম হিসেবে ধরা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত ও সামাজিক পরিবর্তন আড্ডার একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য, স্বশরীর উপস্থিতি-কে অপাঙতেও করে ফেলছে। এই পরিস্থিতিতে আড্ডা সংক্রান্ত আমাদের জানাবোঝার সাথে, সাম্প্রতিক প্রজন্মগুলোর জানাবোঝায় পার্থক্য তৈরী হচ্ছে। ফলে, তারা যাকে আড্ডা বলে, আমরা তাকে বলিনা। তারা যদিও আমাদের আড্ডার কনসেপ্টকে খারিজ করেনা, কিন্তু আমরা তাদেরটা খারিজ করে দেই। ফলে “জেনারেশন গ্যাপ” তৈরী হয়। এই জেনারেশন গ্যাপ আদতে ভিন্ন জেনারেশনের মধ্যে “কমিউনিকেশন গ্যাপ”।
এই পরিস্থিতিতে আমার প্রস্তাবনা খুবই সাধারন, তা হল, আড্ডা শব্দ হিসেবে তার সোনালী দিন অতিক্রম করে এসেছে এবং হিউম্যান ইন্টারেকশন এর এই বিশেষ ফর্মের সাম্প্রতিক পরিবর্তনকে ব্যাখা বা ধারন করতে পারছে না। ফলে, নতুন শব্দ জরুরী হয়ে পরেছে যা ভিন্ন ভিন্ন জেনারেশনের কমিউনিকেশন গ্যাপকে কমিয়ে আনতে পারে।